Monkeypox Outbreak: What You Need to Know

‘সুপারস্টার’ থেকে প্রকৌশলী হওয়ার গল্প

 রাখি মাহবুবা

রাখি মাহবুবা
ছবি: সংগৃহীত

মাথায় পরেছিলেন ‘সুপারস্টার’-এর মুকুট। রাতারাতি হয়ে উঠেছিলেন উপস্থাপনা, মডেলিং আর নাটকের দুনিয়ার তারকা। কিন্তু হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান অভিনেত্রী ও মডেল রাখি মাহবুবা। সে সময় অনেকেই ভেবেছিলেন, হয়তো হারিয়ে গেলেন একজন তারকা। কিন্তু তা হয়নি। নির্দিষ্ট বিরতি শেষে ঠিকই রাখি ফিরে এসেছেন, তবে এবার অন্য দ্যুতিতে আলো ছড়িয়ে।

অভিনেত্রী ও মডেল—২০১০ সালে লাক্স তারকা হওয়ার পর রাখি মাহবুবার নামের সঙ্গে এই দুই পরিচয় যুক্ত হয়। কিন্তু এখন বোধ হয় প্রকৌশলী পরিচয়টাই তিনি আগে রাখবেন। প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্নপূরণের জন্যই রাখি যশ, খ্যাতি, জনপ্রিয়তার মায়া কাটিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন ছাত্রজীবনে। সেটা ২০১৩ সালের কথা। ‘সুপারস্টার’-এর মুকুট জেতার দুই বছরের মধ্যে অভিনয় ও উপস্থাপনায় নিজের অবস্থান গড়ে তুলেছিলেন। তখন ও লেভেল শেষে এ লেভেলে পড়ছিলেন। মডেলিং ও অভিনয়ের ব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে। এরপরও রাখি একটু একটু করে পড়াশোনা ঠিকই চালিয়ে গেছেন। কারণ, ছেলেবেলা থেকে পরিবার ও বন্ধুমহলে ‘পড়ুয়া’ হিসেবে আলাদা নামডাক ছিল তাঁর। গণিত ছিল তাঁর পছন্দের বিষয়, এর প্রমাণ রাখির গ্রেড শিটই বলে দেয়। এ লেভেলে রাখি কোর ম্যাথমেটিকসের সি-ওয়ান, সি-টু, সি-থ্রিতে পুরো ১০০-তে ১০০ নম্বরই পেয়েছিলেন!

প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন রাখি
প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন রাখি
ছবি: সংগৃহীত

পড়ার জন্য জনপ্রিয়তাকে বিদায়

২০১৩ সালে রাখি প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক করার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। স্মৃতি হাতড়ে রাখি বললেন, ‘সময়টা ছিল জুন মাস। আমি তখন ধারাবাহিক, খণ্ড নাটক, মডেলিং আর উপস্থাপনা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে কাউকে কিছু জানাতেও পারিনি। মনে আছে, যেদিন আমার ফ্লাইট, তার দুই দিন আগেও আমাকে নাটকের শুটিং শেষ করতে হয়েছে।’ অবশ্য রাখি অভিনয় ছেড়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে উড়াল দেওয়ার কথা কাউকে জানাতেও চাননি। কারণ, তত দিনে অভিনয়ের মায়ায় পড়ে গেছেন। ভয় ছিল, অভিনয়জগতের প্রিয়জনেরা যদি বলতেন থেকে যেতে, তাহলেই হয়তো দোটানায় পড়তে হতো। তাই বিমানবন্দরে যাওয়ার আগপর্যন্ত কাউকে কিছু বলেননি। চুপচাপ হাতে থাকা সব নাটক-টেলিছবির কাজ শেষ করে পুরোদস্তুর ছাত্রজীবনে ফিরে গেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মায়ের সঙ্গে রাখি
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মায়ের সঙ্গে রাখি
ছবি: সংগৃহীত

পড়াশোনায় এগিয়ে

অভিনয়ে যেমন অল্প সময়েই নিজের অবস্থান তৈরি করেছিলেন রাখি, তেমনি ভিনদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েও নিজেকে চেনাতে খুব একটা সময় লাগেনি। অস্ট্রেলিয়ার পার্থের এডিথ কোয়ান ইউনিভার্সিটিতে (ইসিইউ) ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই ২০১৭ সালে পুরকৌশলে স্নাতক করেছেন। স্নাতকে পড়ার সময় রাখি নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষার্থীর তালিকায় উঠে এসেছেন। ২০১৫-১৭ সাল পর্যন্ত পরপর তিন বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভাইস চ্যান্সেলরস টপ ১০০ স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। বাংলাদেশে করা মডেলিংয়ের অভিজ্ঞতা সেই সময়ও ভীষণ কাজে লেগেছে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁকে হতে হয়েছে ইসিইউ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি সাময়িকীর প্রচ্ছদকন্যা।

‘ভাইস চ্যান্সেলরস টপ হান্ড্রেড স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ নেওয়ার অনুষ্ঠানে
‘ভাইস চ্যান্সেলরস টপ হান্ড্রেড স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ নেওয়ার অনুষ্ঠানে
ছবি: সংগৃহীত

স্নাতক শেষে আবার অভিনয়ে

প্রকৌশল বিষয়ে পড়ার স্বপ্ন ঠিকই ছিল। কিন্তু মন থেকে অভিনয়ের জন্য একটা অন্য রকম টান হারিয়ে যায়নি। তাই স্নাতক শেষ করেই রাখি আবার ফেরেন অভিনয়ে। তবে সেটা অন্যভাবে। যেহেতু ‘পড়ুয়া’ রাখির পড়াশোনাই বেশি ভালো লাগে। তাই স্নাতক শেষ করে তিনি ভর্তি হন ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান একাডেমি অব পারফর্মিং আর্টসে (ওয়াপা)। স্ক্রিন পারফরম্যান্স অ্যান্ড অ্যাক্টিংয়ের ওপর এক বছরের ডিপ্লোমা করেন। অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে জীবনের সবচেয়ে কঠিন বছরটা কাটান রাখি। তিনি বলেন, ‘ওয়াপাতে ভর্তি হওয়াই ছিল আমার জন্য এক বিরাট অর্জন। ওই একাডেমিতে স্ক্রিন পারফরম্যান্স কোর্সের জন্য ৩৫০ জন আবেদন করেছিলেন। সেখান থেকে ৩ দফা পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকারের পর ২৬ জনকে বাছাই করা হয়। আমি ছিলাম সেই ২৬ জনের একজন।’ কিন্তু ভর্তি হওয়ার পর রাখি দেখলেন প্রকৌশলীর জীবন আর অভিনেত্রীর জীবনে ভারসাম্য রাখা এক দারুণ ঝক্কির কাজ। ২০১৯ সালে ওয়াপাতে ভর্তি হন। সেই সময় তিনি কাজ করছিলেন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে অস্ট্রেলীয় একটি তেল ও জ্বালানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে। রাখিকে সপ্তাহে প্রায় ৪০ ঘণ্টা ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হতো, আর শিক্ষার্থী হিসেবে অভিনয় নিয়ে পড়াশোনার জন্য দিতে হতো সপ্তাহে ৩০-৩৫ ঘণ্টা। এভাবেই কাজে আর বিশ্ববিদ্যালয়েই কেটে যেত দিনের ১৫-১৬ ঘণ্টা। বাদবাকি যেটুকু সময় মিলত, সেটুকুও প্রজেক্ট, অ্যাসাইনমেন্টের চক্করে শেষ হয়ে যেত। ২০১৯ সালে এসে রাখির মনে হতে থাকল—আর হবে না! কিন্তু সেখানেই থেমে যাননি তিনি। বরং সেখান থেকে নিয়েছেন নতুন শিক্ষা।

রাখির শিক্ষা

রাখির ভাষায়, ‘সঠিক সময়’ বলে কিছু নেই। ‘এই মুহূর্তই’ হলো সব দ্বিধা আর সংশয়ের সমাধান। ইংরেজিতে বললেন, ‘নাউ ইজ দ্য রাইট টাইম।’ আর তাই এখন রাখি নিজেকে আবার সৃজনশীলভাবে গোছাতে ব্যস্ত। তিনি বুঝতে পেরেছেন স্বপ্নের পেশার পাশাপাশি মনের টানকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। ‘আগে ক্যারিয়ার গুছিয়ে, পরে শখের কাজগুলো করব’, এমন ভেবে আর সময় নষ্ট করতে নারাজ তিনি। কিছুদিন আগে নিজের ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন। সেখানে নিজেই কনটেন্ট তৈরি করে প্রকাশ করছেন। তাঁর এখনকার উপলব্ধি, ভারসাম্য মেনে সবটাই করতে হবে। তাই ধুলা জমে যাওয়া ‘সুপারস্টার’-এর মুকুট আবার ঝেড়েমুছে তৈরি করছেন। প্রকৌশলী রাখি স্বপ্নের পেশায় থেকেও শখের অভিনয়ে আবার ফেরার জন্য প্রস্তুত।

Comments

Contact Form

Name

Email *

Message *