Monkeypox Outbreak: What You Need to Know

মেয়েরা নাকি এমনই হয়

 মেয়েরা নাকি এমনই হয়

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
ইনস্টাগ্রাম

দুই মাস ধরে আমার বড় মেয়েকে কয়েকবার সার্জারির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আর কিছুদিন আগে ওর ছোট বোনকেও কোমরের একটা অস্ত্রোপচার করাতে হলো।

ওরা জানে, আমি ওদের এ বিষয়টা নিয়ে লিখছি। আমি ওদের সঙ্গে কথা বলে, ওদের অনুমতি নিয়ে তবেই লিখতে বসলাম। আমি ওদের ব্যক্তিজীবনের গোপনীয়তাকে সম্মান করি, তাই কিছু লেখার আগে ওদের সঙ্গে আগে আলোচনা করে নিই। তারা আমাকে সব সময় লিখতে উৎসাহ দেয়। আমার মেয়েরা এত দিনে বুঝে গেছে, স্বাস্থ্য নিয়ে যত ধরনের প্রতিবন্ধকতা আছে, সেসব সাহস নিয়ে মোকাবিলা করা এবং এগুলোর সঙ্গে লড়াই করে যাওয়া গর্বের ব্যাপার, লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়।

আমি দেখি, কেমন করে আমার মেয়েরা একজন আরেকজনের খেয়াল রাখে, যত্ন নেয়। আমার ছোট মেয়েটা হাসপাতালের নার্সদের সঙ্গে থেকে থেকে শিখেছে, কী করে বাড়ি গেলে সে তার বোনের যত্ন নেবে। পরের বার সে সেভাবেই বোনের দেখভাল করেছে। আমি অবাক হয়ে দেখি, কী করে আমার মেয়েরা সবকিছু ফেলে সবার আগে একে অপরের জন্য এগিয়ে আসে। আর এভাবে একে অপরকে ভালোবেসে তারা যে আনন্দ পায়, আমি তা দেখে মুগ্ধ হই।

কীভাবে সাহসের সঙ্গে ভয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতে হয়, সেটা আমার সন্তানেরা শিখে গেছে। প্রত্যেকের জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যেখান থেকে কেউ আমাদের উদ্ধার করতে পারে না। ওই সময় চোখ বন্ধ করে বড় বড় দম নেওয়া আর দিন বদলের অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের করার কিছু থাকে না। তখন চোখ বুজে স্থির হয়ে থাকতে হয়, যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে নিশ্বাসের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হয়।

এবারের নারী দিবসের এই লেখা আমি হাসপাতালে বসে লিখছি। আমার চিন্তায় এখন শুধু আমার মেয়েরা এবং বিশ্বের নানা প্রান্তের মেয়েদের কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। কেউ একজন আমাকে বলেছিল, মেয়েদের ভেতর এই যে সবার দেখভাল করার অভ্যাস—এটা একেবারেই প্রকৃতির নিয়ম, মেয়েরা নাকি এমনই হয়। আমি তখন হেসেছিলাম। কিন্তু এরপরই মনে পড়ে গেল, মানুষ অনেক সময় এই অভ্যাসের সুযোগ নেয়। যে ছোট্ট মেয়েটির নিজেরই অন্যের যত্ন আর দেখভালের প্রয়োজন, আমরা তাকেই ছোটবেলা থেকে অন্যের দেখভাল করা, অন্যের জন্য ত্যাগ করা, নিজেকে ছাপিয়ে অন্যকে নিয়ে ভাবতে শেখাই। প্রত্যেক মেয়েকেই শৈশব থেকে শেখানো হয়, ততক্ষণই তারা ভালো, যতক্ষণ তারা অন্যের জন্য ভাববে, কাজ করে যাবে। তাদের অন্তরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যে নিজের দিকে, নিজের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা আর চাহিদার দিকে নজর দেওয়া মানে হলো স্বার্থপরতা।

একটা ছোট্ট মেয়ের উদারতা, অন্যের যত্ন করার স্পৃহাকে অপব্যবহার না করে তার স্বপ্নকে আমাদের উৎসাহ দেওয়া উচিত। ওদের সরলতা আর নমনীয়তার যত্ন নেওয়া আমাদের দায়িত্ব। নারীর ওপর শুধু বড় বড় সহিংসতা, অন্যায় আর নিপীড়নের জন্য সোচ্চার হওয়াটাই এখন যথেষ্ট নয়। শৈশব থেকে আমাদের ভেতর দমনের যে বীজ বুনে দেওয়া হয়, যা কেউ কখনো আমলেই নেয় না, আমাদের সেসব নিপীড়নের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে।

তাই নারী দিবসে আমার প্রত্যাশা থাকবে, আমরা প্রত্যেক মেয়েকে নিজের যত্ন নেওয়ার জন্য উৎসাহ দেব, আমরা তাদের মূল্যায়ন করতে শিখব। তাদের কাছ থেকে যত্নের প্রত্যাশা না করে তাদের যত্ন নেব। আমাদের মনে রাখতে হবে, তারা যদি দৃঢ়, সুস্থ আর সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারে, তাহলে পরিবার আর সমাজেও এর ছাপ পড়বে। তাদের এগিয়ে যাওয়াতেই আমাদের সাফল্য।

আর সবশেষে এ সময়ের মেয়েদের জন্য আমি বলতে চাই, ছোট্ট বন্ধুরা, লড়ে যাও। তোমাদের একে অপরের জন্য ভালোবাসাটাই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথকে মসৃণ করবে। নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হও। নিজেকে এমনভাবে তৈরি করো যেন কেউ বৈষম্যের পাঠ তোমাকে না পড়াতে পারে। তুমি মূল্যবান, সমান আর বিশেষ নও—এমনটা বলার সাহস যেন কেউ না পায়।

ইংরেজি থেকে অনুদিত

Comments

Contact Form

Name

Email *

Message *