- Get link
- X
- Other Apps
‘কাপ সং’ গেয়ে রাতারাতি খ্যাতি পেয়েছিল মিথিলা পালকার। কয়েক বছরের মধ্যেই জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ভারতের এই অভিনেত্রী। লিটল থিংস ওয়েব সিরিজে অভিনয় করে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে সম্প্রতি ফিল্মফেয়ার ওটিটি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। নেটফ্লিক্সের ত্রিভঙ্গ চলচ্চিত্রেও তাঁর অভিনয় প্রশংসা পেয়েছে। ২০১৭ সালে টেডএক্সের এক বক্তৃতায় মিথিলা বলেছিলেন তাঁর প্রেরণার গল্প।
আমরা সবাই জীবনে কখনো না কখনো কোনো না কোনো তারকার প্রেমে পড়েছি। কিছু পাগলামিও নিশ্চয়ই করেছি। আমার এক বন্ধু যেমন বাড়ি ছেড়ে, গাঁটরিবোঁচকা নিয়ে চলে এসেছিল মুম্বাই—তার স্বপ্নের নায়িকার সঙ্গে দেখা করতে। কে সেই নায়িকা? আমিশা প্যাটেল।
আমার বন্ধুটির মনে হয়েছিল, আমিশা প্যাটেলের সঙ্গে দেখা করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো শোবিজে পা রাখা। সে তা-ই করেছিল। এমনিভাবে কয়েক বছর পর সে আবিষ্কার করল, কাজটা সে ভালোবাসতে শুরু করেছে। ১০ বছর ধরে সে অভিনয় করছে। আমিশা প্যাটেল তাঁর জীবনে এখন শুধুই অতীত।
জীবনে সবকিছু পরিকল্পনামাফিক হয় না। আর পরিকল্পনা না থাকাটা দোষের কিছু নয়। আমার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। আমার ছিল প্যাশন, আর আমি শুধু সেটার পেছনে ছুটেছি।
আমার যখন পাঁচ বছর বয়স, পরিবারের সদস্যরা প্রায়ই নাচ বা গান করার জন্য আমাকে অতিথিদের সামনে দাঁড় করিয়ে দিত। আমি খুব লাজুক ছিলাম, বিব্রত হতাম। কিন্তু তাঁদের অনুরোধ আমি ফেলতাম না। সবাইকে বিনোদন দেওয়ার কাজটা আমি উপভোগ করতাম। কিন্তু এই একই পরিবার আমার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল—আদর্শ জীবনের মানে হলো বড় হও, পড়ালেখা শেষ করো আর একটা ভালো চাকরিতে ঢুকে পড়ো।
বিশ্ববিদ্যালয়ে গণমাধ্যম নিয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি আমি একটা থিয়েটারে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করলাম। আমার কাজ ছিল ‘ইয়ুথ থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল’ আয়োজনে সহায়তা করা। আমি খুশি ছিলাম, কারণ অভিনয়ের দুনিয়ার কাছাকাছি থাকতে পারছি। আমার পরিবার খুশি ছিল, কারণ অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনা তাঁদের কাছে ‘কাজ’, আর অভিনয়টা কোনো কাজ নয়। কিন্তু মঞ্চে শিল্পীদের অভিনয় দেখে আমার মনে হলো—আরে! ওই জায়গাতেই তো আমি থাকতে চাই! আমি একটা গল্প বলতে চাই। একটা গল্প হতে চাই। বুঝতে পারছিলাম, স্বপ্নটার পেছনে না ছুটলে জীবনটা খুব অস্থির, নিরানন্দ হবে।
রিকশাচালকদের ধন্যবাদ
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আমার পরিবারকে রাজি করালাম। কিন্তু জানতাম না আমি কি চলচ্চিত্র, নাটক, না টিভির বিজ্ঞাপনে কাজ করতে চাই। অতএব কাজ খুঁজতে লাগলাম। একের পর এক অডিশন দিলাম। মুম্বাইয়ের বাসিন্দা হিসেবে আমরা প্রতিদিনই প্রত্যাখ্যাত হই। সে জন্য ধন্যবাদ দিতে হয় রিকশাচালকদের। গন্তব্য যা-ই হোক, দেখবে রিকশাচালকেরা কখনো যেতে রাজি হন না। অন্তত তিনবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে চতুর্থবার ভাগ্য ভালো হলে তুমি রিকশা পাবে।
তখনো জানতাম না, এই রিকশাচালকেরাই আমাকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার চর্চা করতে সাহায্য করছেন। অধিকাংশ অডিশনেই আমি কাজ পাইনি, কিন্তু দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিবার আমি ঘুরে দাঁড়ানো শিখেছি। ছয়জন রিকশাচালকের কাছে ‘না’ শুনলে তুমি নিশ্চয়ই গন্তব্যে না গিয়ে বাড়ি ফিরে যাও না। তোমাকে কোনো না কোনো বিকল্প খুঁজে নিতে হয়। অতএব আমিও হাল ছাড়িনি।
অপ্রত্যাশিত পাওয়ার আনন্দ
কোনো পরিকল্পনা না থাকা আমার জীবনে একরকম আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কারণ যখন আমি খুঁজছি—কী করা যায়, তখনই ওয়েব সিরিজে কাজ করার সুযোগ আসে। আমি যখন শুরু করি, তখনো ওয়েব সিরিজের ধারণাটা নতুন। কিন্তু আমি কাজটা উপভোগ করছিলাম।
‘কাপ সং’–এর ঘটনাটিও আমার জীবনে ঘটেছে আচমকা। এক বিকেলে হঠাৎই একটা ভিডিও করার সিদ্ধান্ত নিই। আমার এক বন্ধুকে ফোন করে বলি, ‘তুমি কি বাসায় আসতে পারবে? ক্যামেরা ধরার জন্য আমার কাউকে দরকার।’ ঘরে বসে ভিডিওটা করা। আয়োজন খুব একটা ভালো ছিল না। কান পাতলে তুমি পেছনে সাইকেলের ক্রিং ক্রিং শব্দও শুনতে পাবে। কিন্তু সেই ভিডিওটিই অনলাইনে তুলে দেওয়ার পর অপ্রত্যাশিত সাড়া পেলাম। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া যে ভিডিওটা করেছিলাম, সেটিই আমার জীবন বদলে দিল। নতুন অনেক সুযোগের দরজা খুলে গেল। একটা নিখুঁত ভিডিও তৈরির পরিকল্পনা করেই যদি অনেকটা সময় ব্যয় করে ফেলতাম, জানি না কী হতো। আমরা অনেকেই জীবনে খুব তাড়াতাড়ি একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলার চাপ বোধ করি। অথচ তখনো জানি না, আমি জীবনে কী করতে চাই।
বোকা মাছ
আত্মীয়স্বজনের মধ্যে অনেকে আমাকে বলত, ‘তোমার বোন একজন বিজ্ঞানী। আর তুমি এসব কী করছ?’ সত্যি বলতে জীবনের অনেকটা সময় পর্যন্ত আমিও আমার বড় বোনের মতো হতে চেয়েছি। ওর লম্বা চুল ছিল। ব্যান্ড দিয়ে মাথায় ওড়না বেঁধে আমি ওর মতো হতে চাইতাম। কিন্তু একসময় বুঝলাম, সে যা করছে, তা না করেও আমি এমন কিছু করতে পারি, যার জন্য একসময় সে আমাকে নিয়ে গর্বিত হবে। আলবার্ট আইনস্টাইন একবার বলেছিলেন, ‘একটা মাছ গাছ বেয়ে উঠতে পারে কি না, তা দিয়ে তুমি যদি তার সক্ষমতা বিচার করো, সারা জীবন মাছটাকে বোকাই মনে হবে।’
একটা কাজে ভালো না হলেও তুমি হয়তো অন্য তিনটা কাজ ভালো জানো। আমি জানি এটা খুব কঠিন। কিন্তু তুমি তো সবাইকে খুশি করতে পারবে না। তুমি যা পারো, তা হলো নিজেকে খুশি করা, আর সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অতএব সাহসী হও, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো। চাকরি নাও, চাকরি ছেড়ে দাও, নাচো, গাও, প্রেমে পড়ো। নিজের উপযুক্ত জায়গাটা খুঁজে নাও। আর তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো অজানাকে আলিঙ্গন করো।
(ইংরেজি থেকে অনুদিত)
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment