Monkeypox Outbreak: What You Need to Know

চাকরি ছেড়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী

 যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্বস সাময়িকীর তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী লোকটির নাম জেফ বেজোস। আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। যে প্রতিষ্ঠান তিলে তিলে গড়েছেন, সেটিরই প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন এই ধনকুবের। আগামী জুলাই থেকে জেফ বেজোসের পরিচয় হবে—আমাজনের নির্বাহী চেয়ারম্যান। ঝুঁকি নেওয়ার সাহসই তাঁকে এত দূর এনেছে। পড়ুন জেফ বেজোসের দুটি অনুপ্রেরণাদায়ী গল্প।

জেফ বেজোস
জেফ বেজোস

অঙ্কের প্রতি ঝোঁক

ছেলেবেলা থেকেই জেফ বেজোস ভীষণ হিসেবি। কত কিলোমিটারে কত টাকার গ্যাস লাগল, কেনাকাটা করতে গিয়ে কত খরচ হলো, সুযোগ পেলেই মনে মনে এসব অঙ্ক কষতেন।

১০ বছর বয়সে একবার ক্যারাভ্যানে চড়ে নানা-নানির সঙ্গে গ্রীষ্মের ছুটিতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বিভিন্ন বক্তৃতায় তিনি এই ঘটনা বলেছেন। ক্যারাভ্যানটা ছুটছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডার পথে। গাড়ির পেছনের লম্বা সিটটাতে শুয়ে ছিলেন জেফ। নানা গাড়ি চালাচ্ছিলেন। আর তাঁর পাশের আসনে বসে সিগারেট ফুঁকছিলেন নানি। সিগারেটের গন্ধ জেফের একদমই সহ্য হতো না। নানির হাতে সিগারেট দেখে পছন্দসই একটা হিসাব করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। একটা বিজ্ঞাপনে ছোট্ট জেফ দেখেছিলেন—সিগারেটের একেকটা টান মানুষের জীবন থেকে দুই মিনিট কেড়ে নেয়। অতএব পেছনের সিটে শুয়ে শুয়ে জেফ হিসাব করতে শুরু করেছিলেন—নানি প্রতিদিন কয়টা সিগারেট খান, একটা সিগারেটে কয়টা টান দেন...ইত্যাদি। মনে মনে সব হিসাব-নিকাশ করার পর জেফ বলেছিলেন, ‘নানি, তুমি কি জানো সিগারেটের প্রতি টানে জীবন থেকে দুই মিনিট সময় কমে যায়? সেই হিসেবে তুমি তোমার আয়ু নয় বছর কমিয়ে ফেলেছ।’

জেফ ভেবেছিলেন, এ কথা শুনে নানি হাসবেন, নাতির বুদ্ধি আর গণিতের দক্ষতার প্রশংসা করবেন। কিন্তু হয়েছিল উল্টোটা। নানি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর নানা রাস্তার পাশে গাড়ি থামালেন। গাড়ি থেকে নেমে জেফের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যে কথা তিনি বলেছিলেন, জেফ বেজোস নাকি এখনো সে কথাটা হৃদয়ে ধারণ করে রেখেছেন। নানা বলেছিলেন, ‘জেফ, একদিন তুমি বুঝবে, একই সঙ্গে বিনীত ও বুদ্ধিমান হওয়া সহজ নয়।’

নানা কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলো তাঁকে উদ্ভাবক হতে সহায়তা করেছে। জেফের মতো, নানাকে সব সময় নানা রকম সমস্যা সমাধান করতে দেখেছেন। নানা কখনো মাটি তোলার ক্রেন মেরামত করতেন, কখনো পশু চিকিৎসক হয়ে নিজেই খামারের পশুর পরিচর্যা করতেন—এসব দেখে জেফের মনেও ‘গ্যারেজ ইনভেন্টর’ হওয়ার বাসনা তৈরি হয়েছিল। কিশোর বয়সে বাড়ির গ্যারেজে বসে তিনি টায়ারে সিমেন্ট ভরে ‘অটোমেটিক গেট ক্লোজার’ (স্বয়ংক্রিয়ভাবে দরজা বন্ধ করার যন্ত্র) তৈরি করেছিলেন। ছাতা আর টিনের ফয়েল দিয়ে বানিয়েছিলেন সৌরচুলা। ভাইবোনদের বোকা বানানোর জন্য বেকিং ট্রে দিয়ে একটা বিশেষ অ্যালার্মও তৈরি করেছিলেন তিনি।

ভালো চাকরি ছেড়ে দেওয়ার ঝুঁকি

১৬ বছর বয়সে আমাজন চালু করার ভাবনা মাথায় আসে জেফ বেজোসের। তিনি লক্ষ্য করছিলেন, প্রতিবছর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। তাঁর ভাষায়, ‘আমি আর কোনো কিছুকেই এত দ্রুত হারে বাড়তে দেখিনি। লাখ লাখ বইয়ের একটা পাঠাগার, সেটার দৃশ্যমান কোনো অস্তিত্ব নেই—ভাবনাটা আমাকে ভীষণ রোমাঞ্চিত করছিল।’

১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ভাবনাটায় মাথায় লালন করেছিলেন তিনি। তখন জেফ নিউ ইয়র্কের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। বেতন ভালো ছিল। চমৎকার সব সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করতেন। দারুণ একজন বসও পেয়েছিলেন। এতসব থাকার পরও একদিন তিনি বসকে বললেন, ‘চাকরি ছেড়ে আমি ইন্টারনেটে একটা বইয়ের দোকান করতে চাই।’

শুনে বস জেফকে সঙ্গে নিয়ে সেন্ট্রাল পার্কে হাঁটতে গিয়েছিলেন। সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে বলেছিলেন, ‘দারুণ আইডিয়া। তবে আইডিয়াটা তার জন্য আরও ভালো, যার একটা ভালো চাকরি নেই।’ বসে যুক্তিটা জেফ বেজোসের পছন্দ হয়েছিল। অনেক ভেবেচিন্তে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, জীবনে তিনি কোনো আফসোস রাখতে চান না। ৮০ বছর বয়সে গিয়ে যেন ভাবতে না হয়—কেন যে ঝুঁকিটা নিলাম না!

হ্যাঁ, ঝুঁকিটা নিয়েই ফেলেছিলেন জেফ। তবে যাত্রাটা সহজ ছিল না। শুরুতে কেউ বিনিয়োগ করতে চায়নি। প্রথম পুঁজিটা আসে তাঁর মা-বাবার কাছ থেকে। ছেলের হাতে জীবনের সমস্ত সঞ্চয় তুলে দিয়েছিলেন তাঁরা। যদিও ব্যবসাটা ডুবে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি ছিল। মা-বাবার টাকা হাতে পাওয়ার পরও আরও ১০ লাখ ডলারের পুঁজি জোগাড় করতে হয়েছে জেফকে। সে জন্য ৫০ টির বেশি মিটিং করেছেন তিনি। সব বিনিয়োগকারীরা ঘুরেফিরে একই প্রশ্ন করত, ‘এই ইন্টারনেট জিনিসটা কী?’

সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েই সিয়াটলের একটা গ্যারেজে নিজের স্টার্টআপ চালু করেছিলেন জেফ বেজোস। নিজে গাড়ি চালিয়ে পোস্ট অফিসে প্যাকেজ নিয়ে যেতেন ডেলিভারির জন্য। গাড়ি চালাতে চালাতে মনে মনে স্বপ্ন দেখতেন, একদিন অনেক টাকা হবে, সেদিন একটা ফর্কলিফট (মাল তোলার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র) কিনব।

স্বপ্নপূরণের একটা তাড়না জেফ বেজোসের মনে সব সময় ছিল। সেই তাড়না থেকেই প্রধান নির্বাহীর পদ ছেড়ে নতুন কিছু করার কথা ভাবছেন তিনি। সামনের দিনগুলোতে কী উদ্যোগ নিয়ে হাজির হন তিনি, দেখা যাক।

Comments

Contact Form

Name

Email *

Message *