- Get link
- X
- Other Apps
প্রতিদিন দাঁড়িয়ে আট ঘণ্টা কাজ করেন কানিজ
সাবিনা ইয়াসমিন
ঘড়ির কাঁটা তখন বিকেল ছুঁই ছুঁই। রাজধানীর মিরপুর বাঙলা কলেজের সামনে সাবধানতার হলুদ ব্যানারের ভেতর দ্রুত ছুটছেন এক নারী। নিরাপত্তার হলুদ জ্যাকেটে মোড়া তাঁর পোশাক। দূর থেকে দেখেই কথা বলার ইচ্ছে সামলানো গেল না। জানলাম, তিনি ইঞ্জিনিয়ার, নাম কানিজ নাঈমা। কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আত্মবিশ্বাসী কানিজকে দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে। ডিউটি সবে শুরু হয়েছে, চলবে রাত ১২টা অবধি। চারপাশে সজোরে ছুটে চলা বাস আর অসংখ্যা মানুষের ভিড়ে তাঁকে পাওয়া গেল অল্প সময়ের জন্য। কথা বলে জানা গেল, তিনি একজন মা। তাঁর তিন বছরের ছোট্ট একটি ছেলে রয়েছে। নাম সোনাই। বাচ্চার বয়স যখন তিন মাস, তখন থেকেই এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন তিনি। কাজের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আনন্দ নিয়ে কাজ করেন মেট্রোরেলের কর্মরত এই নারী ইঞ্জিনিয়ার।
আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েছেন কানিজ। ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিল্ডিং ডেভেলপার কোম্পানিতে কর্মজীবন শুরু। ২০১৬ সালের জুন থেকে যুক্ত আছেন মেট্রোরেলের প্রজেক্টে। বর্তমানে সাইট ইন্সপেক্টর হিসেবে মেট্রোরেল লাইন ফাইভে (উত্তর) কাজ করছেন।
রোদে পোড়া, বৃষ্টিতে ভেজা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই কানিজের। মিষ্টি হেসে বললেন, ‘রোদ থেকেই তো ফ্রি ফ্রি ভিটামিন ডি পাচ্ছি।’ সাইটে থাকার সময় ৮ ঘণ্টা। নামাজ, টয়লেট, খাওয়া—সবই সাইট রুমেই করতে হয়। রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে প্রতিদিন পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে আট ঘণ্টা কাজকে কোনো অসুবিধাই মনে হয় না তাঁর। কেননা কাজটা তিনি করেন ভালোবেসে। কানিজ বলেন, ‘পরিবার ও আমার সহকর্মীরা সহযোগিতা না করলে এখানে কাজ করা সম্ভব হতো না। যতক্ষণ ফিল্ডে থাকি, কখনোই নিজেকে অনিরাপদ মনে হয় না। কারণ, এখানে যথেষ্ট নিরাপত্তাকর্মী থাকেন।’
বাসায় ছেলে থাকে কানিজের মায়ের কাছে। এ জন্য বারবার মায়ের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। মা হওয়ার পর এমন অনেক দিন গেছে, অসুস্থ বাচ্চার জন্য বিষণ্ন থেকেছেন কানিজ। মা–ই সেই কঠিন সময়ে সাহস জুগিয়েছেন। থেমে যেতে দেননি। কানিজ বলেন, ‘অফিসের মানুষও আমার কাছে আরেকটি পরিবার। তাঁরাও আমাকে কাজের বিষয়ে সব সময় সহযোগিতা করে আসছেন। এ বিষয়গুলো আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেন। আমার সরকারি চাকুরে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিয়ের আগে থেকেই জানতেন যে আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তাই তাঁরা কাজের বিষয় কখনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেননি, বরং সহযোগিতা করেছেন।’
কানিজ যখন কাজ শুরু করেছেন, সেই সময়ের তুলনায় এখন মাঠপর্যায়ে নারী সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানান তিনি। আরও বলেন, এ ধরনের মেগা প্রজেক্ট দেশে থেকেই জাপানের প্রযুক্তিগত শিক্ষা পাওয়ার বড় সুযোগ। চাইলেই অনেক নারী ইঞ্জিনিয়ার সুযোগটা নিতে পারবেন। তবে শর্ত একটাই, কষ্ট করার মানসিকতা থাকতে হবে।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment